পানিতে ডোবা রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা
আমরা প্রতিদিনই কোন না কোন দুর্ঘটনা স্বীকার হচ্ছি তার মধ্যে রয়েছে পানিতে ডুবে যাওয়া। আর পানিতে ডুবে সে ব্যক্তিকে যদি সঠিক সময়ে ডাঙ্গায় উঠানো না হয় না হয় তাহলে সেই ব্যক্তি মারা যাওয়া সম্ভবনা বেশিরভাগ। পানিতে ডুবে যাওয়া ঘটনা থেকে বাঁচতে হলে আমাদের কিছু তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে হবে।
যা জানলে পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে বাঁচানো যেতে পারে। আর আজ আমরা পানিতে ডোবা ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানবো এবং পানিতে ডোবার হাত থেকে কৃত্রিম উপায়ে কিভাবে রক্ষা পেতে হয় সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
ভূমিকা
বাংলাদেশে প্রত্যেক বছরে কোথাও না কোথাও পানিতে ডোবার ফলে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। আর সবথেকে বেশি হারে মৃত্যুবরণ করছে পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুরা। আর এই পানিতে ডোবার ঘটনা বেশিরভাগ দেখা যায় খাল,বিল,নদীতে। আর আজ আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানবো কিভাবে পানিতে ডোবা ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে তার জীবন রক্ষা করা যায়। তাই পানিতে ডোবার প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে হলে অনুগ্রহ করে লেখাগুলো সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
পানিতে ডুবে গেলে করণীয় কি
পানিতে ডুবে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ঠিকমতো সাঁতার না জানা কারণ একটি ব্যক্তির সাঁতার জানা আবশ্যক। কিন্তু এই পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় বেশিরভাগ ছোট ছোট শিশুদের। আর তারা যখন পানিতে ডুবে যায় ডুবন্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস চার থেকে ছয় মিনিট বন্ধ হয়ে যায় তাহলে সেই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। আর পানিতে ডুবে মৃত্যু একটি প্রতিরোধ করা যায়।
কোন ব্যক্তি পানিতে ডুবে গেলে সর্বপ্রথম আতঙ্কিত না হয়ে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে এবং আশে পাশে মানুষের সাহায্য নিতে হবে। এরপর ডুবন্ত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব পানি থেকে তুলে নিয়ে আসতে হবে। পানি থেকে তোলার সাথে সাথে তাকে সোজা করে শোয়াতে হবে এবং দেখতে হবে তার শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে কি না।
তাকে একটু ঝাঁকিয়ে এবং তার নাম জানা থাকলে ডাকতে হবে এবং দেখতে হবে সে কি সাড়া দেন কি না। শ্বাস প্রশ্বাস না নিতে পারলে বুঝতে হবে যে তার শ্বাস-প্রশ্বাসের নালিতে কিছু আটকে গেছে কি না যদি কিছু আটকে থাকে তাহলে হাতের আঙ্গুলী ঢুকিয়ে সকল ময়লা আবর্জনা বের করে দিতে হবে। এরপরেও যদি কোন শ্বাস না নেই তাহলে তাকে মাথা সোজা করে মুখ হা করে ধরতে হবে।
এরপর উদ্ধারকারী ব্যক্তিকে বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে পানিতে ডোবা ব্যক্তির নাকে হাত দিয়ে চেপে ধরে তার মুখের সাথে মুখ লাগিয়ে শ্বাস দিতে হবে আর খেয়াল রাখতে হবে যে ডোবা ব্যক্তির পেট ফাঁস দেওয়ার সাথে সাথে ফুলে যাচ্ছে কিনা যদি পেট ফুলে যায় তাহলে এভাবেই নিঃশ্বাস দেওয়ার কাজ চালিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত ডুবন্ত ব্যক্তি নিজে নিঃশ্বাস নিতে না পারে। আর এভাবে শ্বাস প্রশ্বাস আদান প্রদানের পাশাপাশি ডুবন্ত ব্যক্তির গলার এক পাশে হাত দিয়ে হৃদ স্পন্দন দেখতে হবে।
যদি হৃদ স্পন্দন না থাকে তাহলে বুকের বা পাশে দুই হাত দিয়ে জোরে চাপ দিতে হবে যেন বেশ কিছুটা বুক দেবে যায়। আর ১-২ বছরের শিশু হলে বুকে চাপ দেওয়া যাবে না বরং দু হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিতে হবে। এরকম করে ৩০ বার চাপ দিতে হবে এবং দুইবার করে শ্বাস দিতে হবে। হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত এভাবে চালিয়ে যেতে হবে।
ডুবন্ত ব্যক্তি অনেক সময় ধরে পানিতে থাকার কারণে পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে। আর সেজন্য শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে আনার জন্য ব্যক্তিকে গরম পোশাক পরিয়ে দিতে হবে। ডুবন্ত ব্যক্তি যদি স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে এবং তার জ্ঞান যদি ফিরে তাহলে তাকে হালকা কুসুম গরম পানি এবং তরল জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে।
পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে উদ্ধার করার উপায়
কোন ব্যক্তি যদি পানিতে ডুবে যায় তাহলে তাকে সব থেকে দ্রুত পানি থেকে উপরে তুলে আনতে হবে। তার জন্য আপনি কোন খুটির সাথে নিজেকে ভালোভাবে বেল্ট বাধুন। তারপর ডুবন্ত ব্যক্তির দিকে কোন শক্ত প্যারাসুট অথবা গাছের ডাল এগিয়ে দিতে হবে। এরপর আপনি নিজেকে শক্তভাবে গাছের সাথে রেখে ডুবন্ত ব্যক্তিকে উপরে তুলে আনার চেষ্টা করতে হবে।
পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধে সচেতনতা
বেশিরভাগ ছোট শিশুরাই পানিতে পড়ে মারা যায় কেননা তারা মায়ের হাতের নাগালে বাইরে চলে যায়। তাই যে সকল দিক বিবেচনা করলে পানিতে ডোবার হাত থেকে শিশু বাঁচতে পারে সে সকল বিষয়গুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- পরিবারের যেকোনো একজনকে শিশুর দিকে খেয়াল রাখতে হবে যেন সে চোখের আড়াল না হয়।
- বাড়ির আশেপাশে যদি পুকুর,খাল থেকে থাকে তাহলে চারিপাশে বেড়া দিয়ে দিতে হবে।
- যে সকল বড় বড় পাত্রে পানি রাখা হয় সে সকল পানির পাত্রে ঢাকনা ব্যবহার করতে হবে।
- একটি শিশুকে কোন অবস্থাতেই পুকুরের আশেপাশে বয়স্ক মানুষের সাথে কিংবা একা ঘুরতে যেতে দেয়া যাবে না।
- আর যে সকল শিশুর খিচুনি বা মৃগী রোগ রয়েছে তাদের কোন অবস্থাতেই পুকুরের আশেপাশে একা ছাড়া যাবে না।
আর এসব বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে একটি বাচ্চাকে পানিতে ডোবার হাত থেকে বাঁচানো যাবে।
শেষ কথা
আমাদের সব সময় সতর্ক হবে থাকতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন পানিতে ডোবার দুর্ঘটনা থাকে সবাইকে আমরা বাঁচাতে পারি। আর আজকের এই আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। এরকম সুন্দর সুন্দর আর্টিকেল পেতে হলে আমাদের সাথে থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url